Throwback Thursday... This story I had written as a high-school student almost 17 years back in October of 1997 for my school magazine. The story was meant as an homage to the people who died in the 'Upahaar Cinema Fire' at Green Park, New Delhi on Friday, 13 June 1997.
উঃ ! এই শীতের রাতেও ঘেমে-ঘেমে সব জামা কাপড় ভিজে গেল। আর হবে নাই বা কেন, পুলিশের তাড়ায়ে যে সেই ঘন্টা খানেক থেকে গলি-গলি দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। চার দিন আগে শেঠ ধনিরামকে খুন করে বেশ কিছু টাকা আর গয়নাগাটি নিয়ে পালালাম। সেই থেকে পুলিশের ভয়ে নিজের একটা গুপ্ত আস্তানায় লুকিয়ে ছিলাম এত দিন। যা খাবার-দাবার সেখানে ছিল সে সব দুদিন পরেই শেষ গেল। তাই আজ আর না থাকতে পেরে সাহস করে বেরিয়ে গেলাম কিছু খাবার-দাবার কিনতে কম্বল ঢাকা দিয়ে।
কিন্তু আজ আমার কপালটাই মন্দ। না জানি কি করে যেই দোকানে আমি পাউরুটি ইত্যাদি কিনতে গেছি সেই দোকানেই এক হাবিলদার একটা কুকুর নিয়ে ঢুকেছে। কুকুরটা আমাকে দেখতেই পুরসরে চেঁচাতে শুরু করে দেয় আর সোজা আমার ওপর ঝাঁপ দেয়। ওর গলার চেনটা হাবিলদারের হাথে থাকার জন্য ও ঠিক আমার ওপের উঠতে পারল না। কিন্তু ওর ঝাপে আমার কবলের একটা কোনা ওর মুখে এসে গেল আর তাতেই সেই কোনটা ধরে এক টান দিল। টান পরতেই কম্বলটা আমার গা থেকে নেমে এলো। আমার আসল চেহারা সবার সামনে আসতেই হাবিলদারটা আমায় কিভাবে যেন চিনে ফেলল। চেনামাত্রই সে দিল তার হুইশিলে ফু আর কুকুরটাকে আমার পিছনে লেলিয়ে দিল। কি আর করব, পরি কি মরি করে পালালাম সেখান থেকে। কুকুরটার থেকে বাঁচতে গিয়ে আমার অবস্তা কাহিল হয়ে গেল। ততক্ষণে আবার বেশ কয়েকটা পুলিশ জীপ্ আমার পিছনে লেগে গিয়েছে। বেশ বুঝতে পারছিলাম সারা শহরের পুলিশ সতর্ক হয়ে গেছে।
অনেক কষ্টে গলি ঘুপচি দিয়ে পালিয়ে আমি এখানে এই গলিটার কোনে এসে পরে মনে হলো বেছে গেছি। কিন্তু একী, আবার পুলিশ জীপের সাইরেনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি যে!!! আরে, ওখানে যে খুব আলো দেখতে পাচ্ছি। ওখানে তো সেই সিনেমা হল-টা আছে না যেটা এই বছর খানেক আগে জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। সেই ভয়ংকর অগ্নিকান্ডে অনেকজন মারা গিয়েছিল। তারপর থেকে তো এই হলটা বন্ধ ছিল, কবে আবার ঠিক-ঠাক হয়ে চালু হল। অবশ্য আমি তো মাস দুই শহরের বাইরে ছিলাম আর এখানে এসেই তো এই ঝন্ঝাটের মধ্যে আটকে পরলাম। হয়ত এই মাঝেই এটা আবার শুরু হয়েছে। এই সব ভাভছি কি হটাথ পুলিশের জীপের শব্দ কানে পড়ল, বুঝলাম ওরা একদম কাছে এসে পড়েছে। এবার বাঁচবার একটাই উপায়, এক সিনেমা হাল্টাতেই ঢুকে পড়ি।
এখনও লাস্ট শো শুরু হয়ে বেশিক্ষণ হয়েনি। এতক্ষণ কাস্টিং চলছিল। টিকেট কাউন্টারের লোকটা ভারী অদ্ভূত লাগলো আমার। একটা কম্বল দিয়ে সারা গা-মাথা পর্যন্ত ঢাকা। সে যখন আমাকে টিকেট-টা দিল তখন অর হাথটার এক ঝলক দেখেই আমার গা গুলিয়ে উঠল। ওর হাথটা এমন ভয়ংকর ভাবে জলে গেছে যে অনেক জায়গায় ভেতরের হাড় পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। বোধহয় সেই অগ্নিকান্ড তেই ওর এমনি অবস্থা হয়েছে। যাক এখন এই সব চিন্তা না করে ফিল্মটায় মন দি। কিন্তু চাইলেই কি আর মন বসানো যায়। দুদিন ধরে পেটে একটি দানাও পড়েনি আর এর পরেও যে কিছু পড়বে তারও কোনো আশা দেখতে পাচ্ছি না। সবের ওপর আবার সেই পুলিশের ঝন্ঝাট। আরে ওই তো একটা ছেলে ট্রে-তে করে কি সব খাবারের জিনিস নিয়ে যাচ্ছে। ওকে ডাকি, ওর কাছে যদি কিছু পাওয়া যায়। আরে ভাভতে ভাভতেই দেখি ও চলে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি ধরি ওকে।
আরে! এ আমি কি দেখছি... ইন্টার্ভেলের আলো জ্বলে যেতেই, আমি একি দেখছি... এই ছেলেটার গায়ে তো মাংশ বা চামড়া কিছুই নেই। দুই চক্ষু কঠরের মধ্যে একটার থেকে আবার মাংসের দলা মত বেরিয়ে রয়েছে। উফ! কি বিভৎস!
আরে একি ! এই হল-এ কারা বসে আছে, এরা কি মানুষ, না প্রেতাত্মা!
উঃ! আমি আর এখানে থাকতে পারছিনা, আমায় এক্ষুনি এখান থেকে পালিয়ে যেতে হবে...
ঐ যে, ওরা নিজেদের সিট ছেড়ে উঠে আসছে আমারি দিকে। এরা যে সবাই জীবন্ত কঙ্কাল। কেউ পুরোপুরি কঙ্কাল, যাদের গায়ে এক ফোঁটা মাংশ বা চামড়ার চিহ্ন নেই, আর অন্যদের গায়ে কথাও-কথাও লেগে রয়েছে পোড়া মাংশ আর চামড়ার অবশেষ। কারো আবার চোখের কোটর থেকে বেরিয়ে এসেছে মাংশের দলা, অন্যদের চোখের লেশমাত্রও নেই।
না, এবার এখান থেকে পালাতেই হবে। কিন্তু আমি পালাবো কোথা দিয়ে? এই হলে স্রেফ একটাই দরজা খোলা রয়েছে আর তারই সামনে রয়েছে বালকনিতে যাবার স্নিরি। আর সেইদিয়ে নেমে আসছে আরো অনেক নরকঙ্কাল। আমার পালাবার রাস্তা বন্ধ সবদিক দিয়ে। ওরা আমায় ঘিরে ফেলেছে চারিদিক দিয়ে। হল-এ ঢোকা মাত্র যে হালকা এক গন্ধ পেয়েছিলাম আবার আমি সেটা চিনতে পেরেছি। খুব চড়া ভাভে আসছে এবার সেই গন্ধ, পোড়া মৃতদেহের গন্ধ!
উঃ! আমার গা গুলিয়ে বমি আসছে, আমার হটাত বুকে খুব ব্যথা শুরু হয়েছে, মাথা ঝিম-ঝিম উঠছে, আমি টলে-টলে পরে যাচ্ছি...
হাঁ, আমি এখন সেই প্রেতাত্মাদের সাথে বসেই ফিল্ম দেখছি। আমি আর ওদের ভয় করিনা। ওদের নিয়ে আমার আর কোনো অস্বস্তিও নেই। কারণ...কারণ আমি এখন ওদেরই একজন, আমিও এখন একটি প্রেতাত্মা।
কাল সকালে হয়ত পুলিশ আবিষ্কার করবে আমার মৃতদেহ। এক সিনেমা হলের ধ্বংশাবশেষের স্নিরিতে। তার পোস্টমর্টেম করলে ওরা জানতে পারবে যে আমার মৃত্যু হয়েছে প্রচন্ড ভয় পেয়ে হার্টফেল কোরে। কিন্তু কেউ জানতে পারবে না যে কি দেখে আমার চোখ এমন ছানাবড়া হয়েছিল মৃত্যুর সময়, কি দেখে এত ভয় পেল একটি দাগী চোর, খুনে! কেউ জানতে পারবে না আমার 'সেই রাতের' সেই ভয়ংকর অভজ্ঞতার কথা।।